বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঘোষণায় ছাত্র ও সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ক্যাম্পাস জীবনে গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ ক্যাম্পাসে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যা একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার আশাও জাগিয়েছে।
এর তাৎপর্য তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে গোটা বাংলাদেশে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জুলাই-আগস্টের গণজাগরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার জাগিয়েছে এবং আমরা গতানুগতিক রাজনৈতিক চর্চার বাইরে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চাই।’
কায়েম ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার একই সুরে বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, 'যেহেতু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাই নির্বাচন হলে আমরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’
সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের ভূমিকা ও বাজেট বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনাসহ ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ডাকসুর কার্যক্রম কার্যকর করতে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করবে।’
নির্বাচনি সুষ্ঠুতা নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি আবাসিক হলগুলোতে অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ভোটের সময় নিয়ে সতর্ক হওয়ার বিষয়ে বলেছেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ট্রমা থেকে ক্যাম্পাস ও জাতি এখনও সেরে উঠছে। খুব তাড়াতাড়ি বা খুব দেরিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ব্যাহত হতে পারে। ইতিবাচক ও উৎসবমুখর নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অপরিহার্য।’
সংস্কারের আহ্বান
বাম ছাত্র সংগঠনের জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিক অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ‘আমরা চাই ডাকসু নির্বাচন দ্রুত হোক, তবে তা যেন ২০১৯ সালের একতরফা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হয়।’
সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীদের জন্য সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সিদ্দিক।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারে কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তার জোট সমমনা প্রার্থী দেবে।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম: ঢাবি শিক্ষকের পদাবনতি
একই দাবি জানান বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের অযাচিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত নয়, তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাকে বাধ্য থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোও অনুষদে স্থানান্তর করে অধিকতর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
জমজমাট ক্যাম্পাস
এই ঘোষণাটি ক্যাম্পাসকে নির্বাচনি হাওয়ায় ভাসিয়েছে, শিক্ষার্থী এবং সংগঠনগুলো একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনমূলক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে বদলে দিতে পারে। বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি ও গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
নির্বাচনকে ঘিরে আগামীর পথচলা চ্যালেঞ্জিং। শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি ও নির্বাচনে কারচুপি প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন নির্বাচনের সময়সীমা চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন প্রত্যাশা স্পষ্ট।
শিক্ষার্থীরা আশা করে, দীর্ঘদিনের এই নির্বাচন শুধু তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারই পূরণ করবে না, সারা দেশে ইতিবাচক পরিবর্তনের নজির স্থাপন করবে।